দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ম্যালওয়্যার আক্রমণ: এই ক্রমবর্ধমান হুমকি শনাক্ত এবং প্রতিকারের উপায়

This post is also available in: English Khmer Tamil Nepali Tagalog

২০১৬ সালে, গবেষকরা আবিষ্কার করেন যে কিভাবে বিশ্বের বিভিন্ন সরকার উন্নত গুপ্তচর সরঞ্জাম ব্যবহার করে তাদের নাগরিকদের উপর নজরদারি করছে। কয়েক বছর ধরে নানান সংবাদ প্রকাশের পরেও – ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস এখনও সক্রিয় রয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই স্পাইওয়্যার দিয়ে, থাইল্যান্ডের গণতন্ত্রকামী কর্মীদের টার্গেট করা হয়েছে, এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তিনি নির্বাচনে সুবিধা লাভের জন্য পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেছেন।  

পেগাসাস স্পাইওয়্যার এমন একটি সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির ম্যালওয়্যার, যা কম্পিউটার সিস্টেমের জন্য ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম বা কোড হিসেবে পরিচিত। এর উদ্দেশ্য ডিজিটাল ডিভাইস বা সিস্টেমে আক্রমণ করা, ক্ষতিগ্রস্ত করা বা অক্ষম করা, যা প্রায়শই ডিভাইসের কার্যক্রমের উপর আংশিক বা পুরো নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। একটি ডিভাইস সংক্রামিত হলে, ম্যালওয়্যার তথ্য চুরি করতে, এনক্রিপ্ট করতে বা মুছে ফেলতে, কম্পিউটারের প্রধান কার্যকারিতা পরিবর্তন বা দখল করতে এবং ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই কম্পিউটারের কার্যকলাপের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারে।  

কোভিড-১৯ মহামারী ম্যালওয়্যার আক্রমণের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেছে। হঠাৎ করে ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম ব্যবস্থা এবং অনলাইন ব্যবসা পরিচালনায় পরিবর্তনের ফলে, যারা প্রাথমিক ডিজিটাল নিরাপত্তার জ্ঞান বা দক্ষতার অভাবে রয়েছে, তারা এই ধরনের আক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। ডিপ ইনস্টিংক্টের সাইবার হুমকি ল্যান্ডস্কেপ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ সালে ম্যালওয়্যারের পরিমাণ ৩৫৮% বৃদ্ধি পেয়েছিল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো ম্যালওয়্যারের আক্রমণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন এবং ২০২১ সালে ইন্দোনেশিয়াতে মোবাইল ম্যালওয়্যার আক্রমণ বেড়ে গেছে । র‍্যানসমওয়্যার ছিল এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রচলিত ম্যালওয়্যার হুমকিগুলোর মধ্যে একটি, ২০২০ সালে ৮০০,০০০-এর বেশি আক্রমণ শনাক্ত করা হয়, যার বেশিরভাগই ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডে ঘটেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও আক্রমণের শিকার হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশে ২০০টির বেশি সংস্থাকে টার্গেট করা হয়েছিল

সাধারণ ম্যালওয়্যারের ধরণসমূহঃ

যদিও সমস্ত ম্যালওয়্যার আক্রমণের উদ্দেশ্য ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করা, তবে তারা কীভাবে কাজ করে বা সংক্রামিত সিস্টেমের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তা ভিন্ন। এখানে সাধারণ কিছু প্রকারের ম্যালওয়্যার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

ভাইরাস (Virus): এটি এমন একটি ম্যালওয়্যার যা অন্য প্রোগ্রাম বা ফাইলের সাথে নিজেকে যুক্ত করে এবং ব্যবহারকারী যখন এটি নিজের অজান্তে সক্রিয় করে (যেমন কোনো ফাইল খোলার মাধ্যমে বা সংক্রামিত ডিভাইস প্লাগ ইন করার মাধ্যমে), তখন এটি নিজের একটি অনুলিপি তৈরি করে কম্পিউটার প্রোগ্রাম এবং ফাইলগুলিকে পরিবর্তন করে। এরপর এটি ডেটা এনক্রিপ্ট, অকার্যকর বা সরিয়ে ফেলে।  

MyDoom হল ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষতিকারক ভাইরাসগুলির মধ্যে একটি। ২০০৪ সালে, এটি আনুমানিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি করেছিল এবং বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৫% ইমেইল সংক্রামিত করেছিল, যদিও এটি এশিয়াতে খুব বেশি ক্ষতি করেনি। এবং এটি এখন আর আগের মতো তীব্র নয়, তবুও MyDoom গত কয়েক বছর ধরে সক্রিয় রয়েছে

ওয়ার্মস (Worms): ভাইরাসের মতো, ওয়ার্মসও নিজের অনুলিপি তৈরি করতে পারে। বড় পার্থক্য হলো, ওয়ার্মস ব্যবহারকারীদের কোনো পদক্ষেপ ছাড়াই নিজেই সিস্টেম জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।  

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি পরিচিত ওয়ার্ম ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ, যেমন ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ বা স্কাইপের মাধ্যমে ছড়িয়েছিল। পরিচিতদের কাছ থেকে উত্তেজনাপূর্ণ বার্তা বা আকর্ষণীয় লিঙ্ক সহ বার্তা পাওয়া যায় (যেমন “LOL”, “দেখো আমি কি পেয়েছি!” বা “তোমার এই ভিডিও এখানে পেয়েছি”)। যখন ব্যবহারকারীরা লিঙ্কটিতে ক্লিক করেন, তখন সেই বার্তাটি তাদের পরিচিতদের কাছে পাঠানো হয়। একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো ফিলিপাইনে একটি মেসেজিং ওয়ার্ম ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে ছড়ায়, যেখানে ব্যবহারকারীদের একটি বার্তা পাওয়া যায় যে তাকে একটি আপত্তিজনক ভিডিওতে দেখা গেছে।

অ্যাডওয়্যার (Adware): এই ধরনের ম্যালওয়্যার সংক্রামিত সিস্টেমে অবাঞ্ছিত বা কখনও কখনও ক্ষতিকারক বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে। যদিও এটি তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর, তবে এটি বিরক্তিকর হতে পারে কারণ “স্প্যামি” বিজ্ঞাপনগুলি সংক্রামিত ডিভাইসগুলিতে পপ আপ আকারে আস্তে থাকে, যা কম্পিউটারের পারফরম্যান্সকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর পাশাপাশি, এই বিজ্ঞাপনগুলো ব্যবহারকারীদের আরও ক্ষতিকারক ম্যালওয়্যার ডাউনলোড করার জন্য উৎসাহিত করতে পারে।  

Fireball হল একটি পরিচিত অ্যাডওয়্যার যা ব্রাউজার কুকি হাইজ্যাক করে ম্যালওয়্যার ডাউনলোডারে রূপান্তরিত হতে পারে। Fireball ভুক্তভোগীদের ডিভাইসে কোড পরিচালনা করতেও সক্ষম, যা ম্যালওয়্যার ইনস্টল বা সংবেদনশীল অ্যাকাউন্টের তথ্য চুরি করতে পারে।  

২০১৭ সালে, বিশ্বব্যাপী ২৫০ মিলিয়নেরও বেশি কম্পিউটার এবং এক-পঞ্চমাংশ কর্পোরেট নেটওয়ার্ক Fireball দ্বারা সংক্রামিত হয়েছিল। এর মধ্যে, ২৫.৩ মিলিয়ন সংক্রমণ ভারতে এবং ১৩.১ মিলিয়ন ইন্দোনেশিয়ায় ঘটেছিল।

স্পাইওয়্যার (Spyware): এই ধরনের ম্যালওয়্যার ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই গোপনে কম্পিউটার ব্যবহারকারীর কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং এই তথ্য স্পাইওয়্যার যিনি তৈরি করেছেন তার কাছে প্রেরণ করতে পারে।  

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে বিতর্কিত এবং পরিচিত স্পাইওয়্যার হল Pegasus, যা ২০১১ সালে ইসরায়েলি সংস্থা NSO তৈরি করে। বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টের মধ্যে CitizenLab, এই স্পাইওয়্যার দ্বারা মানবাধিকারের ঝুঁকিগুলোর কথা তুলে ধরেছে, বিশেষ করে সিভিল সোসাইটির জন্য। অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে, Pegasus বার্তা পড়া এবং কপি করা, ফোন কল এবং অবস্থানের ডেটা ট্র্যাক করা, ডিভাইসের মাইক্রোফোন এবং ক্যামেরায় প্রবেশ করা, এবং ইনস্টল করা অ্যাপ থেকে পাসওয়ার্ড এবং অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম। সম্প্রতি, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এবং ভারতের মতো কয়েকটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশে রাষ্ট্র-সমর্থিত সাইবার-নজরদারির রিপোর্ট পাওয়া গেছে যেখানে পেগাসাস ব্যবহার করা হয়েছে।

ট্রোজান হর্স (Trojan horse) বা ট্রোজান: এটি সবচেয়ে বিপজ্জনক ম্যালওয়্যারগুলির মধ্যে একটি, যা সাধারণত ফাইলের আকারে থাকে যাতে ব্যবহারকারীরা এটি তাদের সিস্টেমে কোন শঙ্কা ছাড়ায় খুলে ফেলেন। যার ফলে আক্রমণকারীরা সংক্রামিত কম্পিউটারগুলিতে প্রবেশ করতে পারে এবং তথ্য চুরি করতে বা অন্য ক্ষতিকারক ফাইল ইনস্টল করতে পারে।  

Emotet হল একটি উন্নত ট্রোজান, যা ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে। এই ধরনের ম্যালওয়্যার প্রথমে দুর্বল ওয়েব সার্ভার চিহ্নিত করে, যেখান থেকে স্প্যাম ইমেইল এবং ক্ষতিকারক লিঙ্ক পাঠানো হয়। এটি সিস্টেমে প্রবেশ করলে অতিরিক্ত ক্ষতিকারক ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে। Emotet এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে এবং প্রধানত ভিয়েতনাম, ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ায় ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি এর লক্ষবস্তু।

কী লগার (Keylogger): এই ধরনের ম্যালওয়্যার ব্যবহারকারীর কীবোর্ডের স্ট্রোক রেকর্ড করে সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ এবং চুরি করতে পারে, যেমন ব্যবহারকারীর নাম, পাসওয়ার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের বিবরণ। একটি উদাহরণ হল Snake Keylogger ম্যালওয়্যার, যা পিডিএফ ফাইল সংযুক্তির মাধ্যমে ছড়ায় এবং তারপর ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে। Fortinet-এর মতে, এই ম্যালওয়্যার সংবেদনশীল তথ্য চুরি করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে সংরক্ষিত সার্টিফিকেট, কীবোর্ড স্ট্রোক, স্ক্রিনশট এবং ক্লিপবোর্ডের ডেটা।  

২০২১ সালে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চারটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সংস্থা গুপ্তচরবৃত্তি অভিযানে লক্ষ্যবস্তু ছিল, যেখানে আক্রমণকারীরা কী লগার ব্যবহার করে ডেটা চুরি করে।

রুটকিটস (Rootkits): এই ম্যালওয়্যার আক্রমণকারীকে সংক্রামিত সিস্টেমে অ্যাডমিন বা “রুট” অ্যাক্সেস প্রদান করে। এটি সাধারণত ব্যবহারকারী, সিস্টেমে থাকা অন্যান্য সফ্টওয়্যার, এবং অপারেটিং সিস্টেমের কাছ থেকেও লুকিয়ে থাকার জন্য ডিজাইন করা হয়। এর ফলে অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফ্টওয়্যার রুটকিটস সনাক্ত ও অপসারণ করতে প্রায়শ ব্যর্থ হয়। রুটকিটসের বেশ কয়েকটি ধরন রয়েছে, যেমন User Mode Rootkits, Kernel Mode Rootkits, Bootloader Rootkits, Memory Rootkits, এবং Firmware Rootkits।  

একটি সুপরিচিত আক্রমণ ২০০৮ সালে ঘটে, যখন হ্যাকাররা ইউরোপে পাঠানো হবে এমন সব ক্রেডিট কার্ড রিডারগুলিতে রুটকিট ইনস্টল করে। রুটকিটগুলি ক্রেডিট কার্ডের তথ্য রেকর্ড করে এবং সেই তথ্য পাকিস্তানে হ্যাকারদের কাছে পাঠিয়েছিল। সম্প্রতি, CosmicStrand নামে একটি রুটকিট চীন, ভিয়েতনাম, ইরান এবং রাশিয়ায় সচল রয়েছে।

র‍্যানসমওয়্যার (Ransomware): এই ম্যালওয়্যার ভুক্তভোগীদের তাদের ডিভাইস থেকে লগ আউট করে দেয়, এবং তাদের পুনরায় প্রবেশাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য টাকা দিতে বাধ্য করে। মহামারির সময় সাইবার অপরাধের বৃদ্ধি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছিল যার মধ্যে , র‍্যানসমওয়্যার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। ২০২১ সালে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণ ১৬৮% বৃদ্ধি পেয়েছিল

২০১৭ সালে, একটি ব্যাপক সাইবার আক্রমণ বিশ্বব্যাপী কম্পিউটার সিস্টেমগুলিকে টার্গেট করেছিল। ইন্দোনেশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, জাপান এবং কোরিয়াসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান র‍্যানসমওয়্যার WannaCry, WannaCrypt, WanaCrypt0r 2.0, এবং Wanna Decryptor দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছিল। বিটকয়েনের মাধ্যমে মুক্তিপণ দাবি করার পাশাপাশি, এই ম্যালওয়্যারে একটি ওয়ার্ম অ্যাপ্লিকেশনও ছিল, যা এটিকে দ্রুত অন্যান্য ডিভাইসে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম করেছিল।

কিভাবে বুঝবেন আপনার ডিভাইস সংক্রমিত হয়েছেঃ

আপনার ডিভাইসে ম্যালওয়্যার সংক্রমণ হয়েছে কিনা তা জানার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো একটি ভালো অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার প্রোগ্রামের মাধ্যমে আপনার সিস্টেম স্ক্যান করা। এখানে কিছু লক্ষণ দেওয়া হলো যা আপনার ডিভাইসে ম্যালওয়্যার সংক্রমণের সম্ভাবনা নির্দেশ করে:

আপনার ডিভাইস সঠিকভাবে কাজ করছে নাঃ

আপনার ডিভাইসের স্বাভাবিক কার্যক্রমে হঠাৎ পরিবর্তন হলে এটি ম্যালওয়্যার সংক্রমণের ইঙ্গিত হতে পারে। আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনটি ধীরগতিতে কাজ করতে পারে বা প্রায়ই ক্র্যাশ হতে পারে। এছাড়াও, আপনি আপনার ডিভাইসে ডিস্ক বা স্টোরেজ স্পেস হঠাৎ কমে যেতে দেখতে পারেন।

আপনি বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন পেতে শুরু করেছেনঃ  

আপনার ডিভাইসে এলোমেলোভাবে অনেক বিজ্ঞাপন এবং পপ-আপ দেখা যেতে পারে, যা প্রায়ই অপরিচিত উৎস থেকে আসে।

আপনার সিস্টেমের ইন্টারনেট কার্যকলাপ বেড়ে গেছেঃ 

যখন আপনি কম্পিউটারে কিছুই করছেন না, তখনও আপনি লক্ষ্য করতে পারেন যে ক্রমাগত আপলোড এবং ডাউনলোড কার্যক্রম চলছে, যা অনেক ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করছে।

আপনার কম্পিউটার সেটিংস স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছেঃ   

এটি সংক্রমণের একটি সুস্পষ্ট চিহ্ন।  আপনি কিছু না করলেও আপনার কম্পিউটারের সেটিংস এবং অপশন পরিবর্তন হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার ব্রাউজারের হোমপেজ এবং ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও, আপনি দেখতে পারেন যে কিছু প্রোগ্রাম, যেমন আপনার অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার, কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। যখন আপনি ফাইল খুলতে চেষ্টা করেন, তখন অপরিচিত অ্যাপ এবং প্রোগ্রামও দিয়ে এটি ওপেন হতে পারে।

আপনি আপনার ফাইলে অ্যাক্সেস হারিয়েছেনঃ   

ফাইল খুলতে চেষ্টা করার সময় আপনি এরর মেজেজ পেতে পারেন। আইকন এবং ফাইল এক্সটেনশন পরীক্ষা করুন – যদি এগুলি স্বাভাবিকের থেকে আলাদা দেখায়, তবে এটি ম্যালওয়্যার সংক্রমণের একটি লক্ষণ হতে পারে।

ম্যালওয়্যারের বিরুদ্ধে নিজেকে সুরক্ষিত করা

ম্যালওয়্যার আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য একক কোন সমাধান নেই। ভালো ডিজিটাল নিরাপত্তা চর্চা প্রয়োগ করা গুরুত্বপূর্ণ, যা আপনার ঝুঁকি কমাতে এবং সম্ভাব্য ক্ষতি হ্রাস করতে সাহায্য করবে। আপনি নিচের টিপসগুলি অনুসরণ করে শুরু করতে পারেন:

ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে ডিজিটাল হাইজিন অনুশীলন করুন: 

  • শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং যেখানে সম্ভব, টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সক্রিয় করুন।  
  • ইমেইল আদান প্রদানেসতর্ক হন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ইমেইল বা এর সংযুক্তি খুলবেন না।  
  • আপনার অ্যাকাউন্টের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা সেটিংস পর্যালোচনা করুন।  
  • অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য আপনার ডিভাইস এনক্রিপ্ট করুন।  

কোথাও ক্লিক করার আগে ভাবুন। ইন্টারনেটে ব্রাউজ করার সময় পপ-আপ বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবেন না, এবং ইমেল, টেক্সট মেসেজ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বার্তায় লিঙ্কগুলিতে যাচাই না করে ক্লিক করবেন না। অপরিচিত প্রেরকদের থেকে ইমেল সংযুক্তি খুলার আগে, এগুলি অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম দিয়ে স্ক্যান করুন।  

আপনার ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখুন এবং বৈধ উৎস থেকে সফ্টওয়্যারডাউনলোড করুন। সবসময় অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সফ্টওয়্যার ডাউনলোড করুন, পিয়ার-টু-পিয়ার ফাইল ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (টরেন্ট) থেকে নয়। ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যারকে অগ্রাধিকার দিন। মোবাইল ফোনের জন্য, আপনার ডিভাইস জেলব্রেক বা রুট করা ঝুঁকিপূর্ণ—কেবল অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন। ইনস্টল করার আগে অ্যাপের রেটিং বা রিভিউ চেক করতে ভুলবেন না।  

নিয়মিত ব্যাকআপ রাখুন। আপনার ডেটা নিয়মিত ব্যাকআপ করুন, যাতে ফাইলগুলি কোন কারনে অ্যাক্সেস করা না গেলে আপনার কাছে আরও একটি কপি থাকে। একাধিক ব্যাকআপ রাখার এবং এগুলিকে বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।  

অ্যান্টিভাইরাস অবশ্যই ব্যবহার করুন। এমন ভালো অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার বা অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার ব্যবহার করুন যা সক্রিয়ভাবে থ্রেট স্ক্যান ও ব্লক করতে পারে। নিজেকে নতুন এবং নিত্যনতুন থ্রেট থেকে রক্ষা করার জন্য অ্যান্টিভাইরাস ডাটাবেস আপডেট রাখুন।

সুশীল সমাজের সংগঠন, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), এবং কর্মীদের জন্য ভালো ডিজিটাল হাইজিন অনুসরণ করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের কাজের প্রকৃতির কারণে তারা সাইবার আক্রমণ এবং অন্যান্য ডিজিটাল হুমকির প্রতি আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তারা প্রায়ই সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে কাজ করে এবং ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত থাকে, যা তাদের খারাপ ব্যক্তিদের জন্য একটি বিশেষ লক্ষ্য বানিয়ে তোলে। বছরের পর বছর ধরে এমন আক্রমণের প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, যেমন ২০১২ সালে একটি থাই এনজিওর উপর হ্যাকিংয়ের ঘটনা যেখানে ম্যালওয়্যার ইনস্টল করা হয়েছিল এবং ২০১৫ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পরিবেশগত বিষয়ক কাজ করা একটি এনজিওর উপর একটি পরিকল্পিত আক্রমণের ঘটনা। ২০২০ সালে, একটি সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি দলকে দক্ষিণ এবং পূর্ব এশিয়ার এনজিওগুলির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার প্রমাণ পাওয়া যায়।

সুশীল সমাজের সংগঠনগুলির উপর এই হুমকিগুলি হ্রাস করার জন্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, সম্প্রদায়ের নেতা, এবং বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির মধ্যে হস্তক্ষেপ এবং সহযোগিতা প্রয়োজন। ম্যালওয়্যার আক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করার জন্য, একটি শক্তিশালী ডিজিটাল নিরাপত্তা চর্চার ভিত্তি তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে ডিজিটাল হুমকির বিষয়ে সচেতন হওয়া, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক নীতিগুলি প্রয়োগ করা, ঝুঁকি রিপোর্ট করা, এবং ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়ে অন্যদের শিক্ষা দেওয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যাতে সবার জন্য নিরাপদ স্থান তৈরি করা যায়।

এই ডিজিটাল নিরাপত্তা টিপস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে, নীচের ইনফোগ্রাফিকগুলি আপনার নেটওয়ার্কগুলির সাথে শেয়ার করুন:

আপনি যদি এই গ্রাফিকগুলি আপনার স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করতে চান, তাহলে [email protected]এ যোগাযোগ করুন।

গ্রেটার ইন্টারনেট ফ্রিডম প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে সুশীল সমাজের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য EngageMedia এর কাজ সম্পর্কে আরও জানুন।