এই নিবন্ধটি এনগেজমিডিয়ার ইয়ুথ কমিউনিকেশন ও অ্যাডভোকেসি এবং বৃহত্তর ইন্টারনেট ফ্রিডম প্রকল্পের অংশ হিসেবে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (ANFREL)-এর সহযোগিতায় লেখা হয়েছে।
Read this article in English
বাংলাদেশ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে, যেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৯৮ টি আসনের মাঝে ২২২টিতে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, যা আওয়ামী লীগের টানা পঞ্চম নির্বাচনী জয়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বয়কট করায় এই নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল খুব কম ভোটারের উপস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পর্যবেক্ষকরা রাজনৈতিক মেরুকরণ বৃদ্ধি, রাজনীতিবিদদের মাঝে সহিংসতা বৃদ্ধি, জনপরিসর সংকোচন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অবনতির কথা উল্লেখ করে এই নির্বাচনকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও সুষ্ঠু বলতে অস্বীকৃতি জানায়।
সরকার বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছে এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে। গত বছর জুড়ে আন্দোলনের সময় হাজার হাজার বিরোধী নেতা ও অ্যাক্টিভিস্টকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আমরা দুজন তরুণ অ্যাকটিভিস্ট সুবিনয় ইরন এবং লামিয়ায় তানহার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছি, তারা ডিজিটাল জগতে এবং সাধারণভাবে নির্বাচনকে যেভাবে দেখেছেন, তা বুঝতে পারা যায়। এই প্রতিবেদনে আমরা এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস এর (এএনএফআরইএল) নিম্নলিখিত সদস্যদেরও সাক্ষাৎকার নিয়েছি, যাতে আমরা বাংলাদেশে নির্বাচন সম্পর্কে তাদের অন্তর্দৃষ্টি এবং তরুণ অ্যাক্টিভিস্টদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তাদের অবস্থান জানতে পারি। তারা হচ্ছেন জন রেইনার অ্যান্টিকেরা, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ফর আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন; থারিন্দু দামিথ আবেয়ারত্ন, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ফর ক্যাম্পেইন অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি; এবং ব্রিজা রোসালেস, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। নির্বাচনে প্রতিযোগিতার মাত্রা পর্যাপ্ত না হওয়ায় এএনএফআরইএল (ANFREL) এই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। তবে, তারা পরিবেশকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে।
সমগ্র নির্বাচনী প্রচারাভিযান ও নির্বাচনের দিন নিয়ে এএনএফআরইএল এর দ্বি-সাপ্তাহিক আপডেট পড়ুন।
নির্বাচনে ইন্টারনেটের ভূমিকা
ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশান ইউনিয়ন (আইটিইউ) এর মতে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মোট জনসংখ্যার ৪৪.৫%; তবে সরকারি তথ্য অনুসারে এই হার ৮৩% এর উপরে। বাংলাদেশে প্রায় ৫ কোটি ৩০ লক্ষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ফেসবুককে তাদের দৈনন্দিন সংবাদের প্রধান উৎস হিসেবে ব্যবহার করে, যা তাদেরকে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে রাজনৈতিক দলগুলোর ইনফ্লুয়েন্স অপারেশনের সম্মুখে।
বাংলাদেশের নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রচারণা এবং মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য ব্যবহৃত প্রধান প্ল্যাটফর্ম ছিল ফেসবুক, এরপরে ইউটিউব এবং টিকটক। আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে একটি গবেষণা প্রকাশ করে, যেখানে বিশাল ডেটাসেট বিশ্লেষণ করে ওইসব উপায়কে দেখানো হয়েছে যার মাধ্যমে শাসক দল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বিভিন্ন ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশিদের কাছে তাদের বয়ান প্রচার ও প্রসার করে জনমতকে প্রভাবিত করেছে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অধিকার ভিত্তিক সংগঠন ডিজিটালি রাইটের প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেশ কয়েকটি ভাইরাল রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন মেটার সনাক্তকরণ ব্যবস্থা এড়িয়ে গেছে এবং ব্যবহারকারীদের কাছে প্রয়োজনীয় ঘোষণা ছাড়াই তা দেখানো হয়েছে। অরাজনৈতিক হিসেবে শ্রেণিকৃত এই বিজ্ঞাপনগুলির নব্বই ভাগেই রাজনৈতিক দলের নাম বা রাজনীতিবিদদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ৭২ ভাগ বিজ্ঞাপনে রাজনৈতিক নেতাদের ছবি কিংবা দলীয় প্রতীক অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তানহা এবং ইরন দুজনেই নির্বাচনের সময় প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজনৈতিক বার্তা ছড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
“একজন ভোটার হিসেবে আমি বিভিন্ন প্রচার-অভিযান থেকে থেকে বারবার টেক্সট মেসেজ পেয়েছি, যার বেশিরভাগই ছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সাফল্য তুলে ধরে সরকারপন্থী বার্তা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারণাগুলিও ক্ষমতাসীন দলের সাফল্যকে মহিমান্বিত করেছে এবং তারা এমন কন্টেন্ট ছড়িয়েছে যা বিরোধী দলকে সমালোচনা করে মানুষের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়,” তানহা বলেন।
“(এসব) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভোট বয়কটের জন্য জনমত তৈরি করতেও বড় ভূমিকা পালন করেছে,” ইরন যুক্ত করেন।
ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)-এর যৌথ প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন মিশন একটি নির্বাচনী প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, বেশ কয়েকজন প্রার্থী এবং রাজনৈতিক দল ফেসবুকে আক্রমণাত্মক ভাষ্য এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শনের শিকার হয়েছে, যা তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ট্রান্সপ্যারেন্সি রিপোর্টে মেটা জানিয়েছে যে, তারা এ বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ থেকে ৫০টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং ৯৮টি ফেসবুক পেজ মুছে দিয়েছে যা বিরোধী দল সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছিল। টিকটকের মতে, এই বছরের জানুয়ারি মাসে তারা বাংলাদেশ থেকে ২,৩৫৮টি অ্যাকাউন্ট সরিয়েছে; এই অ্যাকাউন্টগুলি নির্বাচন সম্পর্কিত অসত্য/বিকৃত তথ্য পোস্টের মাধ্যমে নির্বাচনী বয়ানকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিল।
নির্বাচন ছাড়াও রাজনৈতিক বার্তা ছড়ানোর জন্যও সোশ্যাল মিডিয়া প্রধান মাধ্যম। এ বছরের জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের শুরু পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো বেশ কয়েকটি সামাজিক মাধ্যম এবং যোগাযোগে ব্যবহৃত অ্যাপ বন্ধ ছিল বলে জানা গেছে। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকালীনও (যা এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে) সরকার বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছিল।
মিথ্যা তথ্য এবং এ আই- ডিপফেইকের ব্যবহার
ডিসমিসল্যাবের বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নির্বাচনের আগে বা চলাকালীন জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ভুয়া খবর এবং সরকারপন্থী বক্তব্য ছড়ানো হয়েছে; যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মিথ্যা দাবি, নির্বাচনকে সফল কিংবা কারচুপি তথা ব্যার্থ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা, এবং শাসক দল ও বিরোধী পক্ষের দ্বারা আন্তর্জাতিক সমর্থন বা সমালোচনার মিথ্যা খবর ইত্যাদি৷
যদিও তানহা নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের দ্বারা প্রযুক্তির তেমন কোনো ব্যবহার লক্ষ্য করেননি, ইরন বিরোধী দলের বিরুদ্ধে পরিচালিত কিছু ডিজইনফর্মেশন ক্যাম্পেইন লক্ষ্য করেছেন, “যার মধ্যে মিডজার্নি দিয়ে তৈরি চিত্র এবং টিকটক/ফেসবুক রিল অন্তর্ভুক্ত ছিল।”
বাংলাদেশে এআই নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহার সম্পর্কিত কোনো আইন বর্তমানে নেই এবং বিদ্যমান আইন যেমন কপিরাইট আইন এআই এর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতের কাজ করতে অক্ষম কিংবা যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন এখনও খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। এই বছরের মার্চ মাসে সরকার ঘোষণা করেছে যে, তারা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে এআই-এর অপব্যবহার রোধে নতুন আইন প্রণয়ন করবে।
তবে, নির্বাচনের সময় জেনারেটিভ এআই-এর ব্যবহার কম ছিল। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু সরকারপন্থী ইনফ্লুয়েন্সাররা সস্তা প্লাটফর্ম ব্যবহার করে এআই কন্টেন্ট তৈরি করেছে। বগুড়া ২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিউটি বেগমকে লক্ষ্য করে একটি ডিপফেক ভিডিও ক্যাম্পেইন পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে নির্বাচনের দিন তিনি তার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। গাইবান্ধা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহ নাহিদ নিগারকেও একইভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। এছাড়া নির্বাচনের আগেও বিরোধী নেতাদের লক্ষ্য করে ডিপফেক ভিডিওর কিছু ঘটনা ঘটেছিল। ইরন উল্লেখ করেন:
“আমি বিরোধী দলীয় নেতা তারেক রহমানকে নিয়ে করা একটি ডিজইনফর্মেশন ক্যাম্পেইন লক্ষ্য করেছি, যেখানে একটি ডিপফেক ভিডিওতে মিথ্যাভাবে দাবি করা হয়েছে যে, তিনি ইসরায়েলকে সমর্থন করেন, যা অনেকেই বিশ্বাস করেছিলেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান ইসরায়েলবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী দলের প্রচারাভিযানকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি শক্তিশালী ডিজিটাল লিটারেসি সম্পন্ন ব্যক্তিরাও এই ধরনের ডিপফেকের ফাঁদে পড়তে পারেন। এই ধরনের প্রচারণা সত্যিই নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।”
ইন্টারনেট শাটডাউন, ব্লকেড এবং তথ্য প্রবাহে সীমাবদ্ধতা
বাংলাদেশের ইন্টারনেট পরিসর ইন্টারনেট শাটডাউন, তথ্য প্রবাহে বাধা এবং যোগাযোগের সীমাবদ্ধতার ইতিহাসে সমৃদ্ধ, বিশেষ করে নির্বাচনের মতো পরিবর্তনশীল সময়ে। ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০টির অধিক ইন্টারনেট শাটডাউনের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, এবং দেশটি ২০২২ সালে বৈশ্বিক ইন্টারনেট শাটডাউনের দিক থেকে শীর্ষ পাঁচে ছিল। সরকার সাধারণত আন-অফিশিয়াল এবং অ-নথিবদ্ধ মাধ্যমে নেটওয়ার্ক শাটডাউন, ওয়েবসাইট বন্ধ করা, কিংবা কন্টেন্ট অপসারণের জন্য আইন বহির্ভূত অনুরোধ করে। এটা করা হয় যাতে দুর্নীতি কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর প্রকাশিত না হয়, যা দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে বিকশিত করতে সাহায্য করে।
ইরনের মতে, “নির্বাচনের দিনে ইন্টারনেটের গতি কমানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি, এবং ইন্টারনেট অ্যাক্সেসে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না।” তবে, ওওএনআই-এর তথ্য অনুযায়ী, যা ইরন নিশ্চিত করেছেন, নির্বাচনের সময় ৬ ও ৭ জানুয়ারি দৈনিক মানবজমিন, যমুনা টিভি, দৈনিক সমকাল এবং www.voabangla.com-এর মতো কিছু নিউজ ওয়েবসাইটের অনলাইন পোর্টালগুলি ব্লক করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: প্রতিবাদের মধ্যে বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ (ইন্টারনেট সোসাইটি)
তানহা বলেন, “(নির্বাচনের দিনে) আমি মেসেঞ্জারে সমস্যা অনুভব করেছি, এবং ফেসবুক লোড হতে সময় নিচ্ছিল। নির্বাচন পূর্ববর্তী বিরোধী দলের আন্দোলনের সময়ও ইন্টারনেটের গতি ধীর ছিল। অক্টোবর ২০২৩-এ বিরোধী দলের আন্দোলনের সময় আমি ব্যক্তিগতভাবে সংযোগের ধীরগতি অনুভব করেছি। যখন আমি আইএসপি-এর সাথে যোগাযোগ করি, তারা আমাকে জানায় যে, (আন্দোলনের কারণে) এমন গতিই আমার প্রত্যাশা করা উচিত এবং তাদের কাছে ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর কোনো উপায় নেই।”
ইন্টারনেট শাটডাউন ছাড়াও অনলাইনে প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। ইরন প্রার্থীদের নিয়ে সহজলভ্য তথ্যের অভাব সম্পর্কে আরও উল্লেখ করেছেন:
“আমি এমন কোনো ওয়েবসাইট খুঁজে পাইনি যা প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। আমার নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় কতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তা আমি জানতাম না। আমি শুধুমাত্র কয়েকটি নাম সংবাদপত্রে দেখেছি, তবে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে অনলাইনে প্রার্থীদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও আমার ভোট দেয়ার পরিকল্পনা ছিল না, তবুও আমি কৌতূহলী ছিলাম এবং একটি নির্বাচনী অ্যাপ (যার নাম আমি মনে করতে পারছি না) অন্বেষণ করার চেষ্টা করেছি, তবে নির্বাচনকালীন সময়ে এটি অ্যাক্সেসযোগ্য ছিল না এবং এরর দেখিয়েছে।”
এ বছর জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে সমগ্র বাংলাদেশ “কখনো ইন্টারনেট বন্ধ- কখনো চালু” এরকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সরকারী চাকরিতে কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে তৈরি ছাত্র আন্দোলনের (যা এখন রূপান্তরিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের জন্য একটি জাতীয় আন্দোলনে) প্রতিক্রিয়ায় ইন্টারনেট শাটডাউনের এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে দ্য ডেইলি স্টার-এর মতো অনেক সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাচ্ছিল না এবং বাইরে থেকে বাংলাদেশে মানুষের কাছে পৌঁছানো এখনও কঠিন।
OONI (উনি) অ্যাপ থেকে ১৭ই জুলাই, ২০২৪ তারিখে বাংলা আউটলুক সাইটের পরিস্থিতি। (উৎসঃ এঙ্গেজমিডিয়া)
জনপরিসর সীমিতকরণ থেকে সেল্ফ-সেন্সরশিপ
বাংলাদেশে সরকারের সমালচনাকারি সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের উপর দমন-পীড়নের লম্বা ইতিহাস রয়েছে। ২০১৮ সালে তৈরি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (যা ২০২৩ সালে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর মাধ্যমে রহিত হয়েছে—যদিও তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি) প্রায়শই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার এবং তাদের আটক রাখার একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই আইনটি “হুমকি” শব্দটিকে অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করে এবং অনলাইনে কোন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এমন সন্দেহের ভিত্তিতে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করার অনুমতি দেয়। ২০২৩ সালের এপ্রিলের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিন মাসের মধ্যে ৫৬ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা অভিযুক্ত হয়েছেন তাদের অনেকেই বাংলাদেশের সরকারি নীতি, সম্ভাব্য দুর্নীতি এবং অনৈতিক ব্যবসার মতো বিষয়গুলো নিয়ে রিপোর্ট করছিলেন।
২০২৪ সালের নির্বাচন এবং বিরোধী দলের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে রিপোর্ট করা সাংবাদিকরা এখনও এই ঝুঁকিগুলির সম্মুখীন হচ্ছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচন কাভার করা সাংবাদিকদেরও একই ধরনের গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, গত দুটি নির্বাচনী চক্রে—২০১৮ এবং ২০২৪—স্বচ্ছতা এবং ন্যায্যতার অভাব ছিল। ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ, সমালোচক এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের ভয় দেখানো, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং সীমিত নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ ছিল এই দুটি নির্বাচনের কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য।
শারীরিক সহিংসতা, ভাঙচুর এবং তাদের ওয়েবসাইট থেকে সমালোচনামূলক সংবাদ এবং প্রতিবেদন সরানোর জন্য সরকারের ক্রমাগত চাপ ও হুমকীর সম্মুখীন হওয়া সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলি সেল্ফ-সেন্সরশিপ অনুশীলন করে, যা একটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। অনেক সাংবাদিক এবং অ্যাক্টিভিস্ট অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চর্চা নিয়ে ভয় প্রকাশ করেছেন, যার মধ্যে আমাদের দুজন সাক্ষাৎকার প্রদানকারীও রয়েছেন। ইরন বলেন:
“ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন/সাইবার সিকিউরিটি আইন নিয়ে উদ্বেগের কারণে আমি অনলাইনে কিছু পোস্ট করার আগে ভাবতে বাধ্য হই। আমি ক্রমাগত ভয় পাই যে, আমার তথ্য ফাঁস হতে পারে এবং আমি গ্রেপ্তার হতে পারি, যা সহজেই আমার জীবনকে নষ্ট করে দিবে। আমি দেখেছি যে, ভিন্নমত ধারণকারী তথা সরকারের বিতোধীতা করা অ্যাক্টিভিস্টরা সরকারপন্থী গোষ্ঠীগুলোর লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: অধিকারের জন্য সংগ্রাম: বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে যুবাদের চ্যালেঞ্জ
তানহা উল্লেখ করেছেন, “আমি এখন আরও বেশি সতর্কতার সাথে কথা বলি, ভয়ের কারণেই। আমি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন ভ্রমণের বিবরণ, অনলাইনে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকি। অনলাইনে সক্রিয়ভাবে অ্যাক্টিভিজমে যুক্ত হওয়া এখন হয়রানির আশঙ্কাও তৈরি করে। আমি লক্ষ্য করেছি, অনলাইনে ভিন্নমত ধারণের ব্যাপারে মানুষের মাঝে ব্যাপক উদ্বেগ কাজ করে, কারণ মানুষ ভয় পায় ভিন্নমত ধারণের কারণে তারাও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে।”
স্থানীয় স্বাধীন মিডিয়াকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে দমন করা এবং সমালোচকদের সেল্ফ-সেন্সরশিপের দিকে ঠেলে দেওয়া একটি ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি তৈরি করে, যেখানে বেশীরভাগ তথ্যই সরকারপন্থী বয়ান ধারণ করে এবং যথেষ্ট সমালোচনা ছাড়াই প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়। এর ফলে একটি অসম প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয় এবং সরকারী ও রাজনৈতিক অবস্থার একটি অসম্পূর্ণ চিত্র ফুটে ওঠে। সেল্ফ-সেন্সরশিপের এই প্রবণতা সম্পর্কে জন বলেন, “এটি একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা যে, স্বাস্থ্যকর বিতর্কে জড়িত হওয়ার পরিবর্তে যারা জনপ্রিয় মতের বিরোধী মতামত প্রকাশ করেন তারা হুমকি এবং আক্রমণের সম্মুখীন হন।”
থারিন্দু যোগ করেছেন, “সেন্সরশিপ এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে শাসক দলের প্রোপাগাণ্ডা জোরালো হয়, এবং অন্য কণ্ঠগুলো ডিজিটাল পরিসরে ততটা দৃশ্যমান হয় না। ফলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা শারীরিকভাবে এবং ডিজিটালি উভয়ভাবেই দমন করা হয়, এবং অন্য কণ্ঠের জন্য কোনো জায়গা থাকে না।”
ভোট সম্পর্কে যুব সমাজের ভাবনা … এবং অন্যান্য
বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ২৮% তরুণ, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। তারা শিক্ষা খাতে মূল্য সংযোজন কর এবং সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জানুয়ারি ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভোটারদের একটি বড় অংশ ছিল প্রথমবারের মতো ভোটদাতা, এবং দেশের ১১.৯ কোটি নিবন্ধিত ভোটারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
ঢাকার ভবনগুলিতে প্রার্থীদের পোস্টার। [সূত্র: সুবিনয় ইরন]
তবে জানুয়ারি মাসে দেশের রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে তরুণদের বিরত থাকার একটি ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখা যায়। যদিও তরুণরা পূর্ববর্তী রাজনৈতিক আন্দোলনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, তবে এখন আরো বেশি পরিমাণে তরুণরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে সরকারী হিসাব অনুযায়ী মাত্র ৪১.৮ শতাংশ ভোটার উপস্থিত ছিল।
তানহা এবং ইরন দুজনেই প্রথমবারের মতো ভোটার ছিলেন, কিন্তু তারা ভোট দিতে পারেননি বা দেননি।
“ভোট না দেয়া আমার সিদ্ধান্ত ছিল, কারণ নির্বাচন সঠিকভাবে পরিচালিত হয়নি এবং আমার এলাকায় এমন কোনো প্রার্থী ছিল না যাকে আমি সমর্থন করতে পারতাম। নির্বাচনী পরিবেশে প্রকৃত গণতান্ত্রিকতার অভাব ছিল। ভোট না দেয়ার এই সিদ্ধান্ত আমার গণতন্ত্রকে সমর্থন করার অবস্থানকে প্রতিফলিত করে,” ইরন ব্যাখ্যা করেন।
তানহার ক্ষেত্রে, তার নির্বাচনী এলাকা মাদারীপুরে ছিল, যা রাজধানী থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে এবং স্থানগত সমস্যার পাশাপাশি, তানহার ভোট দিতে না যাওয়ার আরেকটি কারণ ছিল এই নির্বাচনের প্রতি প্রতিবাদ জানানো। তানহার মতে, এই নির্বাচন আসলে গণতন্ত্রের প্রহসন, কারণ কে জিতবে তা আগে থেকেই স্পষ্ট ছিল। তবে পরে তিনি জানতে পারেন যে, তার পরিচয় নির্বাচনে অবৈধভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। “নির্বাচনের দিন আমার মা আমাকে জানায় যে, আমার পরিবারে একজন সদস্য, যিনি স্থানীয় এক নেতাকে সমর্থন করতেন, অবৈধভাবে আমার আইডি ব্যবহার করে ভোট দিয়েছেন,” তিনি বলেন। ভোট দেওয়ার জন্য প্রমাণ হিসেবে আইডি প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক হলেও, অবহেলা বা ইচ্ছাকৃত জালিয়াতির কারণে ভিন্ন (নিজের না এমন) বা জাল আইডি নিয়ে কেউ কেউ ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। এরকম ভোটের অনিয়ম ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময়ও দেখা গিয়েছিল।
ইরনের মতে, তরুণরা পূর্ববর্তী রাজনৈতিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে এই ভূমিকা দৃশ্যমান ছিল না:
“ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে শক্তিশালী ছাত্র রাজনৈতিক আন্দোলনের ঐতিহ্য রয়েছে, যেখানে ছাত্ররা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে এই নির্বাচনে কেবল ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাড়া আমি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করিনি। ২০২৩ সালের পুরো সময় জুড়ে বিরোধী দলের কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চলছিল এবং তারা নিষ্ক্রিয় ছিল। কোনো স্বতঃস্ফূর্ত বা স্বাধীন যুব আন্দোলন দেখা যায়নি, ফলে মাঠ কার্যত ফাঁকা ছিল,” ইরন বলেন।
যদিও তানহা নির্বাচনে যুবকদের অংশগ্রহণ দেখেছেন, তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এই অংশগ্রহণ মূলত শাসক দল থেকেই এসেছে:
“নির্বাচনের আগে সরকারের সাফল্যগুলো প্রচার করতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সদস্যরা খুব সক্রিয় ছিলেন। আমি ক্যাম্পাসের দেয়ালে ব্যাপকভাবে সরকারের পক্ষে পোস্টার এবং গ্রাফিতি দেখেছি। দুর্ভাগ্যবশত, প্রচারণা অভিযানেও ক্ষমতাসীন দলের একচেটিযয়া আধিপত্য ছিল; কোনো বিরোধী গ্রাফিতি পরের দিন সরিয়ে ফেলা হতো।”
এই অনুভূতিগুলো তরুণদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান হতাশার ইঙ্গিত দেয়। অনেকেই এ বছর ভোটকেন্দ্রে যাননি, কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা যেমন ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়া, একটি একক দলের আধিপত্য এবং সহিংসতার আশঙ্কা।
ইরন এবং তানহার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায়, থারিন্দু বলেন, “প্রতিক্রিয়াদাতারা নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখেন না এবং তারা ভোটদান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে চাননি, কারণ তারা বিশ্বাস করেন যে তারা ভোট দিক বা না দিক, ফলাফল একই হবে।” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন এবং অর্থবহ বিরোধী দল ও সরকারের সমালোচকদের ভীতি প্রদর্শনের কারণে বাংলাদেশে নির্বাচন ‘স্বাধীন এবং সুষ্ঠু কোনোটাই নয়’ বলে বিবেচিত হয়।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষের অনাস্থার একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ হল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিতর্ক। প্রযুক্তি পরিচালনা করতে সক্ষম প্রশিক্ষিত জনশক্তির অভাব, মেশিনগুলি কিনতে এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চ ব্যয় (হাজার হাজার মেশিন এখন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ত্রুটির কারণে অকেজো হয়ে গেছে) এবং সম্ভাব্য ভোট জালিয়াতির বিষয়ে বিরোধী জোট উদ্বেগ প্রকাশ করে। শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের নির্বাচনে এই উদ্বেগ ও অভিযোগ দূর করতে প্রথাগত ব্যালট এবং বক্স পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল। থারিন্দুর মতে, “ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি ব্যাপক অবিশ্বাস থেকে উদ্ভূত। ইভিএম-এর প্রতি অবিশ্বাস নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি অবিশ্বাসেরই একটি স্বাভাবিক প্রতিফল।”
তবে সব আশা হারিয়ে যায়নি, কারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণে অনীহা এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি হতাশা অবশ্যই সামাজিক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত আন্দোলন এবং অ্যাক্টিভিজমের প্রতি উদাসীনতাকে নির্দেশ করে না। এই প্রবন্ধটি লেখার সময় বাংলাদেশ আবারও একটি তরুণ তথা ছাত্র আন্দোলনের মুখোমুখি হয়েছে, যা এই বছরের জুলাইয়ে শুরু হয় সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের বংশধরদের জন্য ৩০% কোটা বাতিলের দাবিতে। ১৫ জুলাই থেকে পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায়। ১৬ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট এই আন্দোলন “এক দফা দাবি” তে রূপান্তরিত হয়, যা জানুয়ারিতে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ডাক দেয় এবং ৩ আগস্ট পর্যন্ত সহিংসতায় নিহত দুইশ’র অধিকের (যার চার ভাগের এক ভাগ ছিল শিক্ষার্থী) মৃত্যুর জন্য সরকারকে দায়ী করে।
৫ আগস্ট ‘লং মার্চ টু ঢাকা” সমাবেশ চলাকালীন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। কর্তৃপক্ষ যখন দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্ধারণ করছে, এবং সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, ছাত্র এবং তরুণরা তাদের সহ-নাগরিকদের জন্য রাজপথে কাজ করছে— বিশাল জন সমাবেশের পর সড়ক পরিষ্কার করতে এবং যানবাহন নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে। এবং আমরা এখনই অনুমান করতে পারছি না যে পরবর্তীতে কী হবে।
তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, বাংলাদেশি তরুণরা আবারও পরিবর্তনের অনুঘটক হয়ে উঠেছে। “গণতন্ত্রের জন্য ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবসময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এবারও তাই ঘটেছে।” সম্প্রতি জেন-জি অভ্যুত্থান সম্পর্কে তার মন্তব্য ইমেলের মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করা হলে ইরন এই মন্তব্য করেন। “যখন দেশের মানুষ মনে করেছিল যে, তারা আর আগের শাসনকে উৎখাত করতে পারবে না, তখন ছাত্র আন্দোলন দ্রুত মানুষকে নতুন আশা দেয় এবং তা একটি গণআন্দোলনে পরিণত হয়। এই আন্দোলন কেবল সরকার পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আপাতত কোনো সরকারের অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে স্ব-শাসনের ধারণায় নিজেদের পরিচালনা করছে।”
“রাজপথের, মানুষের মাঝে আলাপ-সংলাপ, সংহতি এবং রাজনৈতিক নীতি নিয়ে নতুন ধারণাও দেখা যাচ্ছে। আর, আমি বিশ্বাস করি, এগুলোই গণতন্ত্রের সবচেয়ে সুন্দর দিক।,” এভাবে ইরন উপসংহার টানেন।